সুনীল বড়ুয়া ::
বর্ষায় খরস্রোতা বাঁকখালী নদীর পানির স্রোতে দু’কুল প্লাবিত হলেও এখন বাঁকখালীর বুকে ছোট–বড় অসংখ্য চর। দীর্ঘদিন খনন না করায় এবং দিন দিন ভরাট হয়ে এখন নাব্যতা হারিয়েছে ঐতিহ্যবাহী এ নদীটি। তাই এ নদীর এখন অস্বাভাবিক রূপ। কক্সবাজারের রামু উপজেলার এক সময়ের খরস্রোতা বাঁকখালী নদী এখন শুকিয়ে মরে গেছে। ফলে বাঁকখালীকে ঘিরে জীবিকা নির্বাহকারী কয়েক’শ মাঝির এখন দূর্দিন যাচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাঁকখালী নদীর উজানে বন থেকে গাছ কাটার কারনে বনাঞ্চল এখন ন্যাড়া পাহাড়ে রূপ নিয়েছে। থেমে নেই পাহাড়া কাটা, আর পাহাড়ে হচ্ছে তামাক ও জুম চাষ । ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই পাহাড় ধোয়া মাটি নেমে আসে নদীতে।
জীবনের ত্রিশ বছরেরও বেশী সময় ধরে বাঁকখালী নদীতে নৌকা চালাচ্ছেন মাঝি নুর আহম্মদ (৬১)। তাঁর বাড়ি গর্জনিয়া ইউনিয়নের ঘিলাতলী এলাকায়। তিনি জানান, বাঁকখালী নদীর বুকে এখন অসংখ্য চর। ফলে গর্জনিয়া থেকে ফকিরা বাজার পর্যন্ত প্রায় পনের কিলোমিটার পথ আসতে বর্ষাকালে দুই ঘন্টা সময় লাগত। এখন লাগছে প্রায় দশ ঘন্টা। কিছু কিছু স্থানে একেবারেই পানি শুকিয়ে যাওয়ায় গন্তব্যে পৌঁছতে অনেক ভোগান্তি পোহাতে হয়। সারাদিন পরিশ্রম করে দুইশ টাকা আয় করা যায় না। তাই পরিবার–পরিজন নিয়ে খুব কষ্টে দিন কাটছে।
গর্জনিয়া সিকদার পাড়ার ছাবের আহম্মদ মাঝি ও ক্যায়াজুর বিলের মোস্তাক আহম্মদ মাঝি জানান, বর্ষায় মাঝিদের ভাল সময় কাটলেও বাঁকখালী নদীর পানি শুকিয়ে যাওয়ায় শুষ্ক মৌসুম তাদের জীবনে অভিশাপ বয়ে আনে। ফলে এ মৌসুমে অনেক মাঝি রিকসা চালাচ্ছে, দিন মজুরের কাজ করছে । তিনি জানান, তাঁর মত আরও দু’শতাধিক মাঝি বর্তমানে মানবেতর জীবন–যাপন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বাঁকখালী নদীর উৎপত্তি স্থল বান্দরবানে। নাইক্ষ্যংছড়ি দো’ছড়ি ইউনিয়নের কামি খালের মুখ থেকে রামু ছিকল ঘাট সেতু পর্যন্ত নদী পথের দৈর্ঘ্য প্রায় বিশ কিলোমিটার। এরও প্রায় ১৫ কিলোমিটার দুরে কক্সবাজার বঙ্গোপসাগরে গিয়ে মিলেছে নদীটি।
কবি ও প্রাবন্ধিক এম সুলতান আহমদ মনিরী জানান, বাঁকখালীর উজান থেকে শিকলঘাট পর্যন্ত এলাকার মধ্যে ঠান্ডাঝিরির কুম, ডাকভাঙার কুম, মইশকুম, বাদইজ্যার কুম, দরগাহ কুম, বাইন্যা পুকুরের কুমসহ বাঁকখালী নদীর প্রায় দশটি স্থানে আজ থেকে পাঁচ বছর আগেও পঞ্চাশ ফুটের বেশী গভীরতা ছিল। নদী ভরাট হয়ে যাওয়ায় সেখানেও এখন পানি নেই। ফলে নৌকা চলাচলও বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। সরেজমিনে পরিদর্শনে দেখা যায়, বাইশারী লদু খালের মুখ, মামা ভাগিনার ঝিরি, পালং খাইয়ের মুখ, ছাগল খাইয়া ক্যাম্প, চিকনছড়ি খালের মুখ, ঘিলাতলী, বড়জামছড়ি, গর্জই খালের মুখ, লেবুছড়ি ছরার মুখ, ডাকভাঙা, মইশকুম, মনিরঝিল, হাইটুপী জাদিপাড়াসহ বিভিন্ন স্থানে ছোট বড় অসংখ্য চর জেগে ওঠেছে বাঁকখালী নদীতে। কোন কোন স্থানে হাটু পরিমাণ পানি থাকলেও বেশীর স্থানে পানি ছয় ইঞ্চিরও নীচে। জাদী পাড়ায় দেখা যায়, নদীতে পানি একেবারে শুকিয়ে যাওয়ায় নদীর মাঝখানেই স্থানীয়রা বীজতলা এবং বোরো ধানের আবাদ করছে।
রামু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রিয়াজ উল আলম জানান, দীর্ঘ দিন খনন না করায় এবং বছর বছর পলি জমে ভরাট হয়ে বর্তমানে নাব্যতা হারিয়েছে বাঁকখালী নদী। বর্তমানে নদীটির বিশেষ বিশেষ অংশে ড্রেজিংসহ ২০৮ কোটি টাকার একটি প্রকল্পের কাজ চলছে। আশা করছি,কাজ শেষ হলে নদীটি পুরনো নাব্যতা ফিরে পাবে।
পাঠকের মতামত: